সয়াবিন (Soybean)

0
90

পরিচিতি

বাংলা নামঃ সয়াবিন
ইংরেজী নামঃ Soybean
বৈজ্ঞানিক নামঃ Glycin max
পরিবারঃ Leguminosae
বাংলাদেশে সয়াবীন একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আমিষ ও ভোজ্য তেল উৎপাদনে সয়াবীন এখন অনেক দেশেই একটি প্রধান ফলস।
সয়াবীনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% তেল রয়েছে। অন্যান্য ডাল ও শুঁটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবীন দ্বিগুন আমিষ সম্পন্ন অথচ দাম কম। তাই স্বল্প মূল্যে আমিষ সরবরাহের লক্ষে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে সয়াবীনের চাষ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সয়াবীনের হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৫-২.৩ টন। মোট আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন প্রায় ৪ হাজার টন।

সয়াবীনের জাত

সোহাগ-পিবি-১
সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে ১৯৯১ সালে সয়াবীনের সোহাগ এ জতিটি অনুমোদিন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৫০-৬০ সেমি। বীজ মাঝরি। শত বীজের ওজন ১১-১২ গ্রাম। বীজের রং উজ্জ্বল হলদে। বীজে আমিষের পরিমাণ ৪০-৪৫% এবং তেলের পরিমাণ ২১-২২%। জাতটির বীজের সতেজতা সংরক্ষণ ক্ষমতা বাল। পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী) বপন করলে ফসল সংগ্রহ করতে ১০০-১১০ দিন সময় লাগে। খরিফ মৌসুমে শ্রাবণ মাস থেকে মধ্য-ভাদ্র পর্যন্ত (মধ্য-জুলাই থেকে আগষ্ট মাস) বপন করলে ৯০ থেকে১০০ দিনের মধ্যে ফসল কাটা যায়। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫-২.০ টন হয়। সয়াবীনের সোহাগ জাতটি পাতার হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।

সয়াবীন

বাংলাদেশ সয়াবীন-৪ (জি-২)
বাংলাদেশ সয়াবীন-৪ জাতটি ১৯৯৪ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৬০৬৫ সেমি। বীজের আকার ছোট, হাজার বীজের ওজন ৬০-৭০ গ্রাম। বীজের রং হলদে। শ্রাবণ-ভাদ্র (মধ্য-জুলাই থেকে মধ্য সেপ্টম্বর ) অর্থ্যৎ করিফ মৌসুমে বপন করলে ৮৫-৯৫ দিন এবং রবি মৌসুমে, পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারী) বপন করলে ফসল সংগ্রহ তরতে ১২০-২২০ দিন সময় লাগে। হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৫-২.২ টন। বীজের অংকুরোদগম ক্ষতমা বেশী। জাতটি পাতার হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।

বারি সয়াবীন-৫
তাইওয়ান থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজমের মধ্যে ‘রেনসম’ নামের লাইনটি প্রাথমিক ও আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলন দেয়। এ জাতটি ২০০২ সালে ‘বারি সয়াবীন-৫’ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এ জাতটি বাংলাদেশে সব মৌসুমেই চাষ করা হয়। গাছের উচ্চতা ৪০-৬০ সেি,। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩৫ টি। শুটিতে বীজের সংখ্যা ২.০-৩.০ টি। বীজের আকার সোহাগের চেয়ে সামান্য ছোট এবং ‘বাংলাদেশ সয়াবীন-৪’ এর বীজের চেয়ে বড়। বীজের রং ক্রীম এবং শত বীজের ওজন ৯-১৪ গ্রাম। জতিটির বীজনকাল ৯০-১০০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৬০-২.০ টন।

মাটি

সয়াবীন দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটিতে চাষের জন্য উপযোগী। খরিফ বা বর্ষা মৌসুমে জমি অবশ্যই উঁচু ও পানি নিকাশ সম্পন্ন হতে হবে। রবি মৌসুমে মাজরি নিচু জমিতেও চাষ করা যায়।

জমি তৈরী

মটির প্রকারভেদে জমিতে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালভাবে ঝুরঝুরে ও অগাছা মুক্ত করে বীজ বপন করেত হবে।

বপনের সময়

বাংলাদেশে শীত (রবি) বর্ষা (খরিফ) উভয় মৌসুমেই সয়াবীন বপন করা য়ায়। পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারী) বপন কর ভাল। বর্ষা মৌসুমে শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র মাস পর্যন্ত (মধ্য-জুলাই থেকে আগষ্ট) বপন করা ভাল।

সয়াবীন তোলার পর

বপন পদ্ধতি

সয়াবীন সারিতে বপন করা উত্তম। করে কলাই বা মুগ ডালের মত ছিটিয়েও বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সেমি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০ সেমি রাখতে হয়। গাচ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-৬ সেমি রাখতে হয়।

সারের পরিমান

সয়াবীনের জমিতে প্রয়োগের জন্য সার সুপারিশ নিম্নরুপ।

সারের নামসারের পরিমান/হেক্টর
ইউরিয়া৫০-৬০  কেজি
টিএসপি১৫০-১৭৫  কেজি
এমপি১০০-১২০  কেজি
জিপসাম৮০-১১৫  কেজি
সারের পরিমান

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সবটুকু সার ছিটিয়ে শেষ চাষের সময় জমিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অণুবীজ সার প্রয়োগ এক কেজি বীজের মধ্যে ৬৫-৭০ গ্রাম অণুবীজ সার ছিটিয়ে দিলে ভালভাবে নাড়াচড়া করতে হবে। এই বীজ সাথে সাথে বপন করতে হবে। অণূবীজের সার ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।

পানি সেচ

প্রথম সেচ বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে (ফুল ধরার সময়) এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে (শঁটি গঠনের সময়) দিতে হবে।

আন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাচা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে রবি মৌসুমে ৫০-৬০ টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০ টি গাছ রাখা উত্তম।

পরিপক্কতা ও ফসল সংগ্রহ

সয়াবীন বীজ বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত ৯০-১২০ দিন সময় লাগে। ফসল পরিপক্ক হলে শুটিসহ গাছ হলদে হয়ে আসে এবং পাতা ঝরে পড়তে শুরুকরে। এ সময় গাচ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।

রিপ্লাই করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া এখানে আপনার নাম লিখুন