পরিচিতি
বাংলা নামঃ তিল
ইংরেজী নামঃ Sesame
বৈজ্ঞানিক নামঃ Sesamum indica
পরিবারঃ Pedaliaceae
তিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোজ্য তেল ফসল। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৬১ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশে খরিফ এবং রবি উভয় মৌসুমেই তিলের চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশ তিলের আবাদ খরিফ মৌসুমে হয়। বাংলাদেশেল প্রায় সব অঞ্চলেই তিলের চাষ হয়। আমাদের দেশে সাধারণত কালো ও খয়েরী রং এর বীজের তিলের চাষ বেশী হয়। তিলের জীজে ৪২-৪৫% তেল এবং ২০% আমিষ থাকে। তিলের ফলন হেক্টরপ্রতি ৫০০-৬০০ কেজি। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে ফলন প্রতি হেক্টরে ১২০০ কেজি পাওয়া সম্ভব।
তিলের জাত
টি-৬
একটি উচ্চ ফলনশীল তিলের জাত। স্থানীয় ভাবে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই পদ্ধতির মাধ্যমে জাতটি ১৯৭৬ সালে উদ্ভাবন করা হয়। এ জাতটির গাছের উচ্চতা ৮৫-১০০ সেমি। বীজ চেপ্টা, মাঝরি আকারের। হাজার বীজের ওজন ২.৫-২.৭ গ্রাম। বীজের রং কালো। খরিফ ও রবি উভয় মৌসুমে এ জাতটির চাষ করা যায়। তবে খরিফ মৌসুমে আবাদের জন্য জাতটি বেশী উপযোগী। ফসল বোনা থেকে কাটা পর্যন্ত ৮৫-৯০ দিন সময় লাগে। হেক্টরপ্রতি ফলণ ৯৫০-১১০০ কেজি।
মাটি
পানি জমে থাকে না এমন প্রায় সব ধরণের মটিতে তিলের চাষ করা যায়। উঁচু বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্য বেশী উপযোগী।
জমি তৈরী
তিল চাষের জন্য মাটি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়।
বপনের সময়
তিল খরিফ ও রবি উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থ্যৎ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে (মধ্য-ফেব্রুয়ারী হতে মধ্য-এপ্রিল, খরিফ-২ মৌসুমে অর্থ্যৎ ভাদ্র মাসে (মধ্য-আগষ্ট হতে মধ্য সেপ্টেম্বর) এবং রবি মৌসুমে অর্থ্যৎ আশ্বিন হতে কার্তিক (অক্টোবর হতে মধ্য নভেম্বর) তিলের বীজ বপনের উত্তম সময়।
বপন পদ্ধতি
তিলের বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করলে অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ সেমি রাখতে হবে।
বীজের হার
প্রতি হেক্টরে ৫.৫-৬.৫ কেজি।
সার প্রয়াগ পদ্ধতি
ইউরিয়া সারের অর্ধেক ও বাকি সব সার জমি শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সারের পরিমাণ
তিলের জমিতে নিম্নরুপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমান/হেক্টর |
ইউরিয়া | ১০০-১২৫ কেজি |
টিএসপি | ১৩০-১৫০ কেজি |
এমপি | ৪০-৫০ কেজি |
জিপসাম | ১০০-১১০ কেজি |
জিংক সালফেট (প্রয়োজনে) | ০-৫ কেজি |
বরিক এসিড (প্রয়োজনে) | ৮-১০ কেজি |

পানি সেচ
রবি মৌসুমে চাষ করলে বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় একবার সেচের প্রয়োজন হয়। জমিতে রস না থাকলে ৫৫-৬০ দিন পর ফল ধরার সময় আর একবার সেচ দেওয়া যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
তিল ফসল সংগ্রহ করতে ৮৫-৯৫ দিন সময় লাগে।
অন্যান্য পরিচর্যা
সারকোস্টোরা সিসেমী নামক এক প্রকার ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণের প্রথমে পাতার ছোট, গোলাকার, বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি রংয়েরর দাগ পড়ে। দাগ বিভিন্ন আকারের হয় এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। প্রতিকার
১। এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ গ্রাম হারে বিভিষ্টিন বা ২ গ্রাম হারে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর জমিতে ২-৩ বার সেপ্র করতে হয়।
২। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের চাষ করতে হবে।

তিলের কান্ড পচা রোগ দমন
তিল গাছে কান্ড পচা রোগে ব্যাপকভাবে আক্রমণ হয়ে থাকে। ম্যাক্রোফোমিনা ফাসিওলিনা নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত গাছের কান্ডে ছোট, লম্বা, আঁকা বাঁকা বিভিন্ন ধরণের গঢ় খয়েরি ও কালচে দাগ দেখা যায়। এ দাগ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সমস্ত কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা মরে যায়। প্রতিকার
৩। বীজ বপনের পূর্বে ভিটিভেক্সে-২০০ ছত্রাকনাশক দ্বারা (২-৩ গ্রাম /কেজি বীজে) বীজ শোধনের মাধ্যমে রোগের আক্রামণ কমানো যায়।
৪। এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা ২ গ্রাম হারে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে।
৩। ফসল কাটার পর গাছের শিকড়, আগাছা,আবর্জনা ইত্যাদি পুড়ে ফেলতে হবে।