তিসি[Linseed]

0
77

পরিচিতি

বাংলা নামঃ তিসি
ইংরেজী নামঃ Linseed
বৈজ্ঞানিক নামঃ Linum usitatissimum
পরিবারঃ Linaceae

তিসি থেকে তেল এবং আঁশ পাওয়া যায়। তেলে ফসল হিসেবে জমির পরিমাণের দিক দিয়ে সরিষা, তিল এবং সয়াবীনের পর তিসির স্থান। ফরিদপুর, পাবনা, যশোর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলে তিসি বেশী জন্মে। তিসির তেল ভোজ্য তেল নয়। তিসি তেল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তিসির জাত

তিসির নীলা জাতটি ল্যান্ড রেসেস থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন হয় এবং ১৯৯৮ সালে অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৭০-১০০ সেমি। বীজ ছোট ও চ্যাপ্টা। ফল ডিম্বাকৃতি হয়। হাজার বীজের ওজন ৩.০-৩.৫ গ্রাম। ফলের রং নীল। বীজ হাতে ধরলে পিচ্ছল অনুভূত হয়। জীবনকাল ১০০-১১৫ দিন। ফলন প্রতি হেক্টর ০.৯৫-১.১ টন। এটি একটি খরা সহিঞ্চু ফসল।

মাটি

এটেল মাটি তিসি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগ। পলি দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি তিসির চাষ করা হয়।

জমি তৈরী

তিসির বীজ ছোট বলে জমিতে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও ২-৩ টি মই দিয়ে মসৃণ ভাবে জমি তৈরী করতে হয়।

বপনের সময়

কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর হতে মধ্য-নভেম্বর)

তিসির তেল

বীজের হার

৭-৮ কেজি/হেক্টর

বপন পদ্ধতি

তিসি সাধারণত ছিটিয়ে বপন করতে হয়। তবে সারিতে বপন করা ভাল। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে।

সারের পরিমাণ

সাধারণত তিসি বিনা সারে চাষ কর হয়। তবে ভাল ফলন পেতে হলে নিম্নরুপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়।

সারের নামসারের পরিমান/হেক্টর
ইউরিয়া৭০-৮০   কেজি
টিএসপি১১০-১৩০  কেজি
এমপি৪০-৫০  কেজি

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

ইউরিয়া সার অর্ধেক ও বাকি অন্যসব সার শেষ চাষের সময় জতিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যা

জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনমত ১-২ বার সেচ দিলে ফলন ভাল হয়।

ফসল সংগ্রহ

ফসল পরিপক্ক হওয়ার সময় গাচ ও ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। এমন হলে ফসল কেটে মাড়াই করে এবং রোদে শুকিয়ে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।

অন্যান্য পরিচর্যা

তেল ফসলের বিছাপোকা
বিছাপোকা তিল, সয়াবীন, চীনাবাদাম ওও সর্যমুখী ফসলের প্রধান শত্রু। কীড়া চা বিছিা হলদে রংয়ের এবং গায়ে কাঁটা থাকে। এ পোকার কীড়াসমূহ প্রথমে পাতায় আক্রমণ করে। কীড়া দলবদ্ধভাবে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে পাতলা সাদা পর্দার মত করে ফেলে। পরে এরা সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা ভখাওয়া শুরু করে। আক্রমণ খুব বেশী হলে গাছ বাড়তে পারে না, পাতা ঝাঁঝরা হয়, ফল হয় কিন্তু ফল হয় না। সাধারণত মধ্য-চৈত্র থেকে বৈশাখ (এপ্রিল থেকে মধ্য-মের) মাসে বিছা পোকার আক্রমণ বেশী হয়। প্রতিকার
১। আক্রমণের প্রথম অবস্তায় কীড়াসমূহ দলবদ্ধভাবে পাতার নিচের পৃষ্ঠে লেগে থাকে। এই সময় পোকাসহ পাতা তুলে কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে ক্রীড়া ধবংস করা যায়। সেচ নালায় কেরোসিন দিলে কীড়া পানিতে পড়ে মরে যায়।
২। জরুরী ভিত্তিতে বিছা পোকা দমনের জন্য ডায়াজিনন-৬০ ইসি ২ মিলি অথবা নগস-১০০ ইসি ১ মিলি হারে লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকেলে সেপ্র করতে হবে।

অন্যান্য প্রযুক্তি
তেল ফসল সংরক্ষণ ও তেল নিষ্কাশন
ছোট বীজ সম্পন্ন তেল বীজ (যেমন- সরিষা, তিল, তিসি, গুজিতিল) ভালভাবে শুকিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলেই পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত ভাল থাকে। কিন্তু বড় আকারে বীজ সম্বলিত ফসল (যেমন-চীনাবাদাম, সূর্যমুখী ও সয়াবীন) সংগ্রহের সময় বীজ অতিরিক্ত পানি থাকে। উক্ত বীজ সাবধানতার সাথে শুকাতে হবে যেন শুকানোর সময় অতিরিক্ত পানি এবং উচ্চ তাপের কারণে বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট না হয়। শুকানোর পর বীজের আর্দ্রতা ৮-৯০% হবে। সে অবস্থায় বীজ ঠান্ডা করে পলিথিন আচ্ছাদিত চটের বস্তা বা ডুলির মধ্যে রাখতে হবে। পলিথিনের মুখ ভাল করে বন্ধ করতে হবে যেন বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। মাটি ও বাঁশের পাত্রের উপরে মাটি অথবা গোবরের আস্তর দিতে হবে। বীজ ভর্তি পাত্র বা বস্তা কাঠের বা বাঁশের তৈরী মাচায় রাখতে হবে। এক্সপেলারের সাহায্যে সূর্যমুখী বীজের তেল নিষ্কাশন করা যায়। এ পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশন করলে নিচে তেলের সাথে লবণ জমে থাকবে। এ অবস্থায় উপর থেকে তেল অন্য পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। এ তেল দীর্ঘদিন ভাল থাকবে। তবে তেল বেশী দিন সংরক্ষণ না করে তেল বীজ সংরক্ষণ করা ভাল।

তিসি খেত

তেল ফসল

বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন তেল ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবাদি তেল ফসলসমূহ হচ্ছে সরিষা, তিল, গর্জনতিল, চীনাবাদাম, তিসি, সূর্যমুখী, কুসুম ফুল ও সয়াবীন। প্রায় সাড়ে ৫.৪৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে এসব ফসলের চাষ হয়। এবং প্রায় ৫.৫৬ লক্ষ মেট্রিকটন ভোজ্য তেল উৎপাদিত হয়। এ উৎপাদন দেশের প্রয়োজনীয় তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। ফলে প্রতি বছর ১০০০-১১০০ কোটি টাকার তেল ও তেলবীজ আমদানি করা হয়। তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য দেধে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। এযাবৎ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট হতে দেশে চাষোপযোগী সরিষার ১৩টি, তিলের ৩টি, চীনাবাদামের ৭টি, তিসির ১টি, সূর্যমুখীর ২টি, গর্জনতিলের ১টি, ও সয়াবীনের ৫টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। উফশী জাতসমূহ এবং চাষাবাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

রিপ্লাই করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া এখানে আপনার নাম লিখুন