পরিচিতি
বাংলা নামঃ পাট
ইংরেজী নামঃ Jute
বৈজ্ঞানিক নামঃCorchorus capsularis
পরিবারঃMallows
মৌসুম
ফাল্গুনের শেষ থেকে আষাঢ়ের শেষ পর্যন্ত।
জাত
দেশী পাট | তোষা পাট | কেনাফ |
বিজেআরআই দেশী পাট-৫ | ও-৯৮৯৭ | বিজেআরআই কেনাফ-২ |
বিজেআরআই দেশী পাট-৬ | বিজেআরআই তোষা পাট-৩ | |
এটম পাট-৩৮ | ||
বিনাদেশী পাট-২ |
চাষের উপযোগী জমি
পলি দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি সব চাইতে উপযোগী। এটেল থেকে শুরু করে বেলে দোআঁশ মাটিতেও পাট চাষ করা যায়। পাট নিস্কাশন ব্যবস্থা যুক্ত উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমিতে ভাল হয়।
জমি তৈরি
জমি ৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে উত্তমভাবে প্রস্তুত করতে হয়। মিহি মাটি পাট বীজ বপনের জন্য উত্তম। জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে।
সার প্রয়োগ
গোবর সার দিলে, বপনের ২-৩ সপ্তাহ পূর্বে জমিতে সম্পূর্ণ গোবর সার ছিটিয়ে ভাল করে চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং বপনের দিনে ইউরিয়া উপরি-প্রয়োগের অংশ বাদ দিয়ে বাকী ইউরিয়া ও অন্যান্য স রের সবটা একত্রে মিশিয়ে জমিতে ছিটিয়ে মই দিয়ে ভাল করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অতপর বপনের ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার ও চারা পাতলা করে উপরি-প্রয়োগের জন্য রক্ষিত ইউরিয়া জমিতে পুনরায় ছিটিয়ে দিতে হবে।

সারের মাত্রা
জমির পরিমাণ | গোবর সার(কেজি) | ইউরিয়া( কেজি) | টিএসপি( কেজি) | এমপি(কেজি) | জিপসাম( কেজি) | জিংক সালফেট( কেজি) |
গোবর সার দিলেএক হেক্টর | ৩৭২০ | ১২+১০০* | ১৭ | ২২ | – | – |
গোবর সার না দিলেএক হেক্টর | – উপরি-প্রয়োগে ব্যবহৃত | ১০০+১০০* | ৫০ | ৯০ | ৪৫ | ১০ |
বীজ বপনের সময়
দেশী পাট
বিজেআরআই দেশী পাট-৫
চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ
বিজেআরআই দেশী পাট-৬
চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ
এটম পাট-৩৮
ফাল্গুনের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্রের শেষ সপ্তাহ
বিনাদেশী পাট-২
ফাল্গুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চৈত্রের শেষ সপ্তাহ
তোষা পাট
ও-৯৮৯৭
চৈত্র
বিজেআরআই তোষা পাট-৩
চৈত্র
কেনাফ
বিজেআরআই কেনাফ-২
চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ
বীজ বপন
ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টর-প্রতি ৬.২৫-৭.৫০ কেজি বীজ লাগে। লাইনে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৩.৭৫-৫.০০ কেজি বীজ লাগে। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার বা ১২ ইঞ্চি এবং লাইনে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৭-১০ সেন্টিমিটার বা ৩-৪ ইঞ্চি হতে হবে।
আগাছা দমন-চারা পাতলাকরণ
বীজ বপনের ১৫-২১ দিনের মধ্যে ১ম নিড়ানী এবং ৩৫-৪২ দিনের মধ্যে ২য় নিড়ানী দিয়ে আগাছা দমন ও চারা পাতলা করতে হবে। ৩য় নিড়ানী প্রয়োজনমত দিতে হবে।
পাটের রোগবালাই
রোগ বালাই- এর নাম
ক্ষতির ধরণ/ চিনিবার উপায়
দমন ব্যবস্থাপনা
যান্ত্রিক বা চাষাবাদ মূলক
বালাই নাশক ব্যবহার দ্বারা
চারার মড়ক
গোড়ায় কালো দাগ ধরে চারা মারা যায়
মরা চারা উপড়ে ফেলতে হবে, তবে বীজ শোধন করে বুনলে সাধারণত এই রোগ হয়না। ভিটাভেক্স-২০০ (০.৪%) দিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে।
ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটারে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে সেপ্র করা যেতে পারে।
ঢলে পড়া
ছোট বড় উভয় অবস্থায় গাছের শিকড়ে এই রোগের জীবাণু আক্রমণ করে, ফলে গাছ ঢলে পড়ে।
জমিতে পানি থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। ক্ষেত আবর্জনা মুক্ত রাখতে হবে। পাট কাটার পর গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটারে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে সেপ্র করা যেতে পারে।

কান্ডপচা
কান্ডে গাঢ় বাদামী রং এর দাগ দেখা দেয় এবং দাগের উপর বহু কালো বিন্দু দেখা যায়। এই রোগে গাছ ভেংগে পড়ে।
আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হবে। পাট কাটার পর গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বীজ শোধন করে বুনতে হবে। জমিতে পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটারে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে সেপ্র করা যেতে পারে।
কালো পট্টি
কান্ডে কালো বেষ্টনীর মত দাগ পড়ে এবং হাত ঘষলে হাতে কালো দাগ লাগে। এই রোগে গাছ ভেংগে পড়ে না, তবে শুকিয়ে মারা যায়।।
প্রথমে রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটারে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে সেপ্র করা যেতে পারে।
পাতায় হলদে ছিট পড়া বা ক্লোরোসিস
পাতায় হলদে-সবুজ ছিট দাগ পড়ে ও আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
নিরোগ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। প্রথমে রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ডায়াজিনন ৬০ ইসি অথবা সবিক্রন হেক্টরপ্রতি ১ লিটার হারে সেপ্র করতে হবে।
পাটের পোকামাকড়
পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন। পোকা মাকড় দমন।
পাট কাটা
সাধারণত ভাল ফলন ও উন্নত মানের আঁশের জন্য ক্ষেতের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিলে (সাধারণত ১১০-১২০ দিনে প্রায় ৫০% গাছে ফুল আসে) পাট কাটা উচিত। উল্লেখিত সময়ের পূর্বে পাট কাটলে আঁশের মান ভাল থাকে, কিন্তু ফলন কম হয়। আবার দেরীতে কাটলে ফলন বেশী হয় কিন্তু আঁশের মান খুব খারাপ হয়।
সংগ্রহত্তোর কার্যাদি
পাট কাটার পর ছোট-চিকন ও মোটা পাটগুলো আলাদা আলাদা আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর জন্যে পাতার অংশ খড়-কুটা দিয়ে ৭২ ঘন্টা (৩ দিন) ঢেকে রাখলে পাতা ঝরে যায়। অতঃপর আঁটিগুলোর গোড়া ৭০-৯০ ঘন্টা (৩-৪ দিন) পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জাগ তৈরিকরণ
পরিস্কার ও অল্প স্রোত আছে এমন পানিতে জাগ দিতে হবে। জাগের আকার যদি চৌকাকার বা আয়তাকার হয় তবে প্রথমে নির্দিষ্ট মাপ মোতাবেক এক স্তর আটি পাশাপাশি গোড়া-মাথা করে বিছানো ও বাঁধা হয়। প্রথম স্তর আঁটি সাজানোর পর আড়াআড়ি ভাবে দ্বিতীয় স্তর আঁটি ১ম স্তরের নিয়মে সাজানো ও বাঁধা হয়। বদ্ধ পানিতে পাট পঁচালে প্রতি ১০০ আঁটি পাটের জন্য ১ কেজি ইউরিয়া সার সরাসরি জাগের আঁটির সারিতে ছিটিয়ে ুদতে হয়। এতে পাট তাড়াতাড়ি পঁচে এবং আঁশের মান ভাল হয়।
জাগ ডুবানো
জাগ এমন ভাবে ডুবাতে হবে যেন জাগের উপর ৩-৪ ইঞ্চি এবং নীচে কমপক্ষে ২০-২৫ ইঞ্চি পানি থাকে। জাগের উপর কচুরীপানা বা খড়-কুটা বিছিয়ে তার উপর পাথর বা কংক্রিটের চৌকা চাকতি দিয়ে অথবা খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে জাগ ডুবানো উচিত। জাগ ডুবানোর জন্য কখনও জাগের উপর মাটির চাক বা কলাগাছ বা কাঠের গুঁড়ি দেয়া উচিত নয়। কারণ তাতে আঁশের বর্ণ কালচে হয়ে যেতে পারে।
পচন বুঝার উপায়
জাগ দেয়ার ৮-১০ দিন পর থেকেই পচন পর্যীক্ষা করা উচিত। পচন পরীক্ষার জন্য ২-৩ টি পাট জাগের আঁটি থেকে বের করে তার মধ্যাংশ থেকে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ছাল কেটে একটি ছোট শিশির ভিতর পানি দিয়ে ঝাঁকানোর পর শিশির পানি ফেলে আবার পরিস্কার পানি দিয়ে ঝাঁকিয়ে য়দি দেখা যায় যে, আঁশগুলো বেশ পৃথক হয়ে গেছে, তখন বুঝতে হবে জাগের পচন শেষ হয়েছে। তাছাড়া ২/৩ টা পচনশীল পাট গাছের ছাল ধুয়ে পরীক্ষা করেও দেখা যেতে পারে।
ছাল পচানো পদ্ধতি
পানি অঞ্চলে, অর্থাৎ যেখানে পাট পঁচানোর জন্য যথেষ্ট পানি পাওয়া যায় না সেখানে কাঁচা অবস্থাতেই পাট থেকে ছাল ছড়িয়ে নিয়ে সেই ছাল অল্প পানিতে পচানো যেতে পারে। পাটের ছাল পঁচানোর নতুন বা রিবন পদ্ধতির বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো ঃ পাট থেকে পাতা ঝরানোর পর কাঠের হাতুড়ির সাহায্যে গাছের গোড়া কিছু থেঁতলে নিতে হয়। এরপর মাথা চেঁছে ইংরেজী ইউ অক্ষরের মত তৈরি করে একটি বাঁশ মাটিতে পুঁতে নিতে হয়। তারপর তিনটি পাট-কাঠি ইউ এর মধ্যে রেখে ছাল দু’দিক থেকে টান দিলেই কাঠি থেকে পাট ছাল সহজে পৃথক হয়ে আসে। পরে কয়েকটি গাছের ছাল একত্রে আঁটি বেঁধে একটি বড় চাড়ির মধ্যে রেখে পঁচানো হয়। একেক চাড়িতে প্রায় ৩০ কেজি পরিমাণ ছাল পঁচানো যায়।
আঁশ ছাড়ানো ও পরিস্কারকরণ
পচন শেষ হলে পাট গাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানো যায় ঃ
ক) শুকনা জায়গায় বসে একটা একটা করে আঁশ পৃথক করে পরে কয়েকটি গাছের আঁশ একত্রে ধৌত করা যায়। এই পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ালে আঁশের মান ভালো হয় এবং প্রতিটি পাট কাঠি আস্ত থাকে।
খ) হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে পঁচানো আঁটি থেকে কয়েকটি গাছের গোড়া বের করে একটা কাঠের মুগুড় দ্বারা পিটানোর পর গোড়ার দিক থেকে প্রায় ২০ ইঞ্চি পরিমাণ দূরে ভেংগে কয়েকটি ঝাঁকি দিলেই ভাংগা অংশ থেকে পাট কাঠি আলাদা হয়ে যায়। এরপর পৃথক হওয়া আঁশটুকু হাতে জড়িয়ে বাকি অংশ পানিতে সমান্তরাল রেখে ৪-৫ বার সম্মুখ-পিছনে ঝাকি দিলেই আঁশ পৃথক হয়ে আসে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যে প্রকারেই আঁশ ছাড়ানো হোক না কেন, আঁশ ছাড়ানোর সময় গাছের গোড়ার অংশের পঁচা ছাল দিয়ে ঘষে মুছে ফেলতে হবে এবং আঁশ ছাড়ানোর পর প্রত্যেকটি গাছের আঁশের গোড়া সমান করে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
আঁশ শুকানো
বাঁশের আড়ায় ঝুলিয়ে আঁশ শুকানো উচিত। আঁশ কখনো মাটিতে বিছিয়ে শুকানো উচিত নয়। শুকানোর পর আঁশ একত্রে বেঁধে গুছিয়ে গুদামে বিক্রির জন্য রাখা হয়। ভিজা অবস্থায় আঁশ কখনো গুদামে রাখা উচিত নয়।