মুগ ডাল (Mung bean)

0
201

পরিচিতি

বাংলা নাম : মুগ
ইংরেজী নাম : Mung bean
বৈজ্ঞানিক নাম : Vigna radiata
পরিবার : Leguminosae

বাংলাদেশে সুস্বাধু ডাল ফসলের মধ্যে মুগ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সব জেলাতেই মুগ ডাল চাষ হয়ে থাকে। তবে বরিশালে ও পটুয়াখালী জেলায় এর চাষ বেশী হয়। বাংলাদেশে মুগ ডালের মোট আবাদী জমির পরিমান প্রায় ৭৬ হাজার হেক্টার এবং উৎপাদন প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

জাত

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক মুগ ডালের বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ৪টি জাত ব্যাপক জমিতে কৃষক পর্যায়ে আবাদ হচ্ছে। এ জাতসমূহ হল বারি মুগ-২ (কান্তি), বারি মুগ-৩(প্রগতি), বারি মুগ-৪ (রূপসা) এবং বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী)।

বারি মুগ-২ (কান্তি)
জার্মপ্লাজম সংগ্রেহর আওতায় সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বারি মুগ-২ বা কান্তি জাতটি বাছাই করা হয়। ১৯৮৭ সালে এ জাতটি কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৪০-৪৫ সেমি। বীজের রং সবুজ। বীজের ত্বক মসৃণ। হাজার বীজের ওজন ৩০-৪০ গ্রাম। বারি মুগের কান্তি জাতটি দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং বারি মৌসুমের শেষ দিকেও চাষ করা যায়। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৫-১৮ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২৪%। জীবনকাল ৬০-৭০ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ০.৯-১.১ টন। জাতটি সারকস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৩ (প্রগতি)
বারি মুগ-৩ বা প্রগতি জতিটি সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত। এ জাতটি ১৯৯৬ সালে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৫০-৫৫ সেমি। বীজ মসৃণ ও রং বাদামি সবুজ। হাজার বীজের ওজন ২৮-২৯ গ্রাম। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৪-১৭ মিনিট। দিবস নিরক্ষেপ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুমে বিলম্বে আবাদ করা যায়। আমিষের পরিমাণ ১৯-২৪ %। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.০-১.১ টন। জাতটি সারকস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৪ (রূপসা)
বারি মুগ-৪ বা রুপসা জতিটি সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত। এ জাতটি সারা দেশে চাষাবাদের জন্য ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৫০-৫৫ সেমি। বীজ মসৃণ ও রং বাদামি সবুজ। হাজার বীজের ওজন ২৮-৩২ গ্রাম। এ জাত দিবস নিরক্ষেপ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুমে বিলম্বে বপনযোগ্য। এ জাতটি দেশের দক্ষিন অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৫-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৪ টন। জাতটি সারকস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী)
বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী) জাতটি ১৯৮৭ সালে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। বারি মুগ-৫ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছের পাতা, ফল ও বীজ আকারে বেশ বড়। বীজের রং গাঢ় সবুজ। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪২ গ্রাম। জাতটির বৈশিষ্ট্য হল এর ফল এক সাথে পাকে। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৭-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২২%। জাতটির জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন্‌। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৫ টন। জাতটি সারকস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

মুগ ডাল বেছে রাখা

বারি মুগ-৬
বাংলাদেশে গম কাটার পর থেকে রোপা আমন ধান রোপনের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ২০ লক্ষ হেক্টর জমি পতিত থাকে। এ সমস্ত জমিকে কাজে লাগানোর জন্য উপযোগী মুগের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে AVRD থেকে মুগডালের অনেকগুলো জাত/লাইন সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এই লাইনগুলো বিভিন্ন সময়ে ডাল গবেষণা কেন্দ্রে ছাড়াও বহুস্থানিক পরীক্ষা করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০০৩ সালে ‘বারিমুগ-৬’ জতিটি চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়। গাছের উচ্চতা ৪০-৪৫ সেমি। একই সময়ে প্রায় সব গুটি পরিপক্ক হয়। পাতা ও বীজের রং গাঢ় সবুজ এবং পাতা চওড়া। ফল আসার পরে দৈহিক বৃদ্ধি কম। দানার আকার বড়। প্রতি ১০০ বীজের ওজন ৫.১-৫.২ গ্রাম। গম কাটার পর এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা হয়। এ ছাড়া খরিফ-২ ও বরি মৌসুমের শেষেও বপন করা হয়। হলুদ মোজাইক ভাইরাস এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। জীবনকাল ৫৫-৫৮ দিন। ফলন ১৫০০ কে/হেঃ

মাটি ও জমি তৈরী

বেলে দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি, মাঝরি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ আবাদের জন্য উপযোগী। ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও প্রয়োজনীয় মই দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরী করতে হয়।

বীজের হার ও বপন পদ্ধতি

বারি মুগ-২, বারি মুগ-৩ ও বারি মুগ-৪, এর জন্য হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ কেজি। বারি মুগ-৫ এর জন্য ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়োজন। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমান সামান্য বেশী দিতে হবে। ছিটিয়ে ও সারি করে বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেঃ মিঃ রাখতে হবে। এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত (ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগ হতে মার্চের মধ্য ভাগ)। খরিফ -২ মৌসুমে শ্রাবণ-ভাদ্র মাস (আগষ্টের প্রথম হতে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগ)। রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বপনের উত্তম সময় পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)

সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

সারের নামসারের পরিমান/হেক্টর
ইউরিয়া৪০-৫০ কেজি
টিএসপি৮০-৮৫ কেজি
এমপি৩০-৩৫ কেজি
অণুজীব সার৪-৫ কেজি
সারের পরিমান

শেষ চাষের সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুপারিশ মত নির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ কর যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অনুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণত অনুজীব সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে না।

মুগ ডাল খেত

রোগ বালাই দমন

মুগের পাতার দাগ দমন
সারকোস্পোরা ক্রয়েন্টা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। আক্রান্ত পাতার উপর ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতি দাগ পড়ে। আক্রান্ত পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সম্পূর্ণ পাতাই ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির ঝাপটার মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বেশী আর্দ্রতা ৮০% সেমি. এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। প্রতিকার
১। ব্যাভিষ্টিন (০.২%) নামক ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (বারি মুগ-২,৩,৪ এবং ৫) চাষ করতে হবে।

মুগের পাউডারি মিলিডিউ রোগ দমন
ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগে পাতায় পাউডারের মত আবরণ পড়ে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের অধিক প্রকোপ দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। প্রতিকার
১। বিকল্প পোষাক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
২। টিল্ট-২৫০ ইসি বা থিওভিট (০.২%) ১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

মুগের হলদে মোজাইক রোগ দমন
মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতার উপর হলদে ও গাঢ় সবুজ দাগ পড়ে। সাধারণত কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। বিকল্প পোষাক ও সাদা মাছির অধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তারে সহায়ক। প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। সাদা মাছি দমনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
৩। আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হবে।

ফসল সংগ্রহ

মধ্য-কার্তিক থেকে শেষ ভাগ (অক্টাবর শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম)।

রিপ্লাই করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া এখানে আপনার নাম লিখুন