বাংলা নামঃ মটরশুটি
ইংরেজী নামঃ Pea / Green pea/ Garden pea
বৈজ্ঞানিক নামঃ Pisum sativum
পরিবারঃ Fabaceae / Leguminosae
Sub family: Papillionasae
বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে মটরশুটির চাষ হয়। আমিষ সমৃদ্ধ এ সবজির সিদ্ধ করা সবুজ শুটি বিকেলের নাস্তায় বেশ জনপ্রিয়। আজকাল পারিবারিক অনুষ্ঠানের বিশেষ রান্নার আয়োজনে ও পরিপক্ক শুটি ডাল হিসেবে এদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষভাবে শহরাঞ্চলে এ সবজির জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশে আরকেল, বনভীল, গ্রীন ফিস্ট, আলাস্কা, স্নো ফ্লেক, সুগার স্ন্যপ নামের জাতগুলোর আবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট বারি মটরশুটি-১,বারি মটরশুটি-২ ও বারি মটরশুটি-৩ নামের ৩টি জাত অবমুক্ত করেছে। বারি মটরশুটি-১ ঃ এ জাতের ফুলের রং সাদা এবং শুটি সবুজ। প্রতি শুটিতে ৪-৭টি বীজ থাকে। শুটি বেশ মিষ্টি। প্রতি গাছে ২০-২৫টি শুটি ধরে। পরিপক্ক শুকনাবীজ কুঁচকানো, রং বাদামি। বপনের ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে সবুজ শুটি সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি পাউডারি ও ডাউনি মিলডিউ রোগ প্রতিরোধী। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন সবুজ শুটি পাওয়া যায়। বারি মটরশুটি-২ ঃ শুটি হালকা সবুজ। আকৃতি কিছুটা চ্যাপ্টা। শুটির আকার ৮ x ২ সেমি। এ মটরশুটি বেশ নরম। অপরিপক্ক বীজসহ সবুজ সটরশুটি ীশমের মত খাওয়া যায়। শুটি সালাদ হিসেবে বা সিদ্ধ কেও খাওয়া যায়। পরিপক্ক শুকনা বীজ গোলাকার ও সবুজ। বপনের ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে সবুজ শুটি সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি পাউডারি ও ডাউনি মিলডিউ রোগ প্রতিরোধী। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ১২-১৪ টন সবুজ শুটি পাওয়া যায়।

মটরশুটি শীত প্রধান ও আংশিক আর্দ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল। ১২০-১৮০ সে. তাপমাত্রায় এটি সবচেয়ে ভালো হয়। মটরশুটির জন্য দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়ে মটর শুটির চাষ হয়। বীজ বোনা হয় সাধারণত নভেম্বর মাসে।
জমি খুব ভালো ভাবে তৈরি করতে হবে এর জন্য ৪/৫টি চাষ ও মই দিতে হবে। জমিতে ৪০সেমি দুরত্বে সারি করে ২০ সেমি পর পর বীজ রোপণ করতে হবে। জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা থাকলে সারিগুলো ১৫সেমি উঁচু ও ১.২ মিটার চওড়া বেডে স্থাপন করা শ্রেয়। দুই বেডের মাঝে ২০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।
জাত ও বপন পদ্ধতি অনুসারে হেক্টর প্রতি প্রায় ৬০-৭০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

মটরশুটির জমিতে প্রতি হেক্টরে নিম্ন বর্ণিত হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সার | মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) | * শেষ চাষে জমিতৈরির সময় দেয় | পরবর্তীপরিচর্যাহিসাবে দেয় |
বীজ বপনের২০ দিন পর | |||
গোবর | ৮-১০ টন | সব | – |
ইউরিয়া | ৪৫-৬০ কেজি | ২২-৩০ কেজি | ২৩-৩০ কেজি |
টিএস পি | ১৪৮-১৬০ কেজি | সব | – |
এম পি | ১১২-১১৮ কেজি | ৫৬-৫৯ কেজি | ৫৬-৫৯ কেজি |
ভালো ফসলের জন্য বাউনী দেয়া দরকার । সারি বরাবর খুটি পুঁতে সুতলি দিয়ে বাউনি দেয়া যায়। শুকনো মৌসুমে ২-১ বার সেচ দিলে ফলন ভালো হয়। ফল ধরলে অন্তত এক বার সেচ দেয়া বাঞ্ছনীয়। সারির মাঝে হালকা কোপ দিয়ে মাঝে মাঝে আগাছা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
রোগবালাইয়ের মধ্যে ড্যাম্পিং অফ, রাষ্ট, অ্যানথ্রাকনোজ এবং পাউডারী মিলডিউ প্রধান। এ সব রোগ চারা অবস্থায় আক্রমণ করে। ডাইথেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/লিটার) প্রয়োগ করে এ সব রোগ দমন করা যায়। সে সাথে প্রতি লিটার পানিতে রিডোমিল এম. জেড ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ক্ষেতে সেপ্র করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

পোকামাকড়
কাটুই পোকা
এ পোকা চারার গোড়া কেটে ফেলে ফসলের ক্ষতি করে। প্রাথমিক অবস্থায় ভোর বেলায় কেটে ফেলা চারার গোড়ার চারপাশ হতে পোকা খুঁজে মেরে ফেলে এর প্রকোপ কমানো যায়।
মাজরা পোকা
শুটির গায়ে ছিদ্র করে। এর দমনে ১০ লিটার পানিতে ৩৫ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে সেপ্র করতে হয়। আই পি এম অনুসরণে নিম তেল ২০০ মি লি ও ৫০ মি লি তরল সাবান একত্রে এক লিটার পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে দুই বার সেপ্র করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।
মটর শুটির বীজ বোনার ৩০ থেকে ৪০ দিন পর আগাম জাতে ও ৫০-৬০ দিন পর নাবি জাতে ফুল আসে। ফুল আসার ২৫-৩০ দিন পর থেকেই অপক্ক শুটি সংগ্রহ করা শুরু করা যায়। শুটি তোলার পর ছায়া যুক্ত স্থানে ঝুড়িতে করে নিয়ে গিয়ে পরিবহন করতে হয়। ডাল হিসাবে সংরক্ষণ করতে হলে পাঁকা শুটি গুলি প্রথমে অল্প রোদে ও পরে ২-১ বার ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
ভালো জাতে বীজের ফলন হেক্টর প্রতি ১-৩ টন ও কাঁচা শুটির ফলনের পরিমাণ প্রায় ১০-১৪ টন।
১। কৃষি প্রযুক্তির হাতবই, বারি, ১৯৯৯।
২। লিফলেট, নর্থওয়েস্ট ক্রপ ডাইভারসিফিকেশন প্রজেক্ট, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা।