বাংলা নাম : ছোলা
ইংরেজী নাম : Chick pea
বৈজ্ঞানিক নাম : Cicer arietinum
পরিবার : Leguminosae
ডাল ফসলের এলাকা ও উৎপাদনের দিক থেকে ছোলা বাংলাদেশে তৃতীয় স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জতিমতে ছোলার চাষ হয়। এর মোট উৎপাদন প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিাটিউট কর্তৃক এ পর্যন্ত ছোলার ৮টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত জাতমসূহের মধ্যে রয়েছে বারি ছোলা-২ (বড়াল), বারি ছোলা-৩ (বরেন্দ্র), বারিে ছোলা-৪ (জোড়াফুল) এবং বারি ছোলা-৫ (পাবনাই)। ছোলার এ জাতসমূহ একক ফসলের পাশাপশি আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
বারি ছোলা-২ (বড়াল)
এ জাতটি ১৯৮৫ সালে (ICRSAT) হতে আনা হয়। পরবর্তীতে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল হিসেবে ১৯৯৩ সালে এ জাতটি সারাদেশে চাষাবাদের জন্য বারি ছোলা-২ নামে অনুমোদন করা হয়। গাছের কেনোপি মাঝরি বিস্তৃত, শাখার অগ্রভাগ তুলনামুলকভাবে হালকা ও উপশিরা লম্বা গাছের রং গাঢ় সবুজ। স্থানীয় জাতের চেয়ে হাজার বীজের ওজন ১৪০-১৫০ গ্রাম। বীজের পার্শ্বদিকে সামান্য চেপ্টা। বীজের রং হালকা বাদামি। বীজের আকার বড় হওয়ায় এ জাতের ছোলা কৃষক ও ক্রেতার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ৩০-৩৫ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২৩-২৭%। বারি ছোলা-২ এর জীবনকাল ১২০-১৩০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৩-১.৬ টন। এ জাত নুয়ে পড়া বা উইল্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
বারি ছোলা-৩ (বরেন্দ্র)
বারি ছোলা-৩ বা বরেন্দ্র জাতের মূল কৌলিক সারিটি ১৯৮৫ সালে (ICRSAT) হতে আনা হয়। বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে উএ জাতটি ১৯৯৩ সালে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছ খাড়া প্রকৃতির। রং হালকা সবুজ, পত্রফলক বেশ বড় এবং ডগা সতেজ। বীজের আকার বেশ বড়। হাজার বীজের ওজন ১৮৫-১৯৫ গ্রাম। ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ৪০-৪৪ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২৩-২৬%। সঠিক সময়ে বুনতে পাকতে সময় লাগে ১১৫-১২৫ দিন। এ জাতটি রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদের জন্য বেশী উপযোগী। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৮-২.০ টন পাওয়া যায়।
বারি ছোলা-৪ (জোড়াফুল)
এ জাতটি ১৯৮৫ সালে (ICRSAT) হতে নার্সারীর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে জাতটি কৃষক পর্যায়ে আবাদের জন্য বারি ছোলা-৪ নামে অনুমোদন করা হয়। এক বৃন্তে ২টি করে ফুল ও ফল ধরে। গাছ মাঝরি খাড়া এবং পাতা গাঢ় সবুজ। কান্ডে খয়েরি রংয়ের ছাপ দেখা যায়। বীজের পার্শ্ব দিক সামান্য চেপ্টা, ত্বক মসৃণ। বীজের রং হালকা বাদামি। হাজার বীজের ওজন ১৩২-১৩৮ গ্রাম। গাছের উচ্চতা ৫০-৬০ সেমি। ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ৩২-৩৮ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ১৮-২১%। জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৯-২.০ টন। এ জাতটি ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
বারি ছোলা-৫ (পোবনাই)
বাংলাদেশ বিভিন্ন এলাকার জার্মপ্লাজম থেকে বারি ছোলা-৫ বা পাবনাই জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। পরবতর্কীতে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে জাতটি চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। গাছ কিছুটা ছড়ানো প্রকৃতির। গাছের উচ্চতা ৪৫-৫০ সেমি এবং রং হালকা সবুজ। চারা অবস্থায় গাছের কান্ডে কোন রং থাকে না, কিন্তু পরিপক্ক অবস্থায় কান্ডে হালকা খয়েরিত্মং পরিলক্ষিত হয়। বীজ আকারে ছোট, রং ধূসর বাদামি এবং হিলাম খুবই স্পষ্ট। বীজের পার্শ্ব কিছুটা চেপ্টা এবং ত্বক মসৃণ। হাজার বীজের ওজন ১১০-১২০ গ্রাম। ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ৩৫-৪০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২২%। এ জাত ১২৫-১৩০ দিনে পাকে। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৮-২.০ টন।
বারি ছোলা-৬ (নাভারুন)
বারি ছোলা-৬ বা নাভারুন জাতটি ১৯৮৫ সালে (ICRSAT) হতে আন্তর্জাতিক নার্সারীর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৫৫-৬০ সেমি। পত্রফলক মাঝারি আকারের এবং হালকা সবুজ। চারা অবস্থায় কান্ডে কোন রং দেখা যায় না, কিন্তু পরিপক্ক অবস্থায় কন্ডে হালকা খয়েরি রং পরিলক্ষিত হয়। বীজের আকার কিছুটা গোলাকৃতি, ত্বক মসৃণ এবং রং উজ্জ্বল বাদামি হলদে। বীজের আকার দেশী জাতের চেয়ে বড়। হাজার বীজের ওজন ১৫৫-১৬৫ গ্রাম। এ জাতের ডাল রান্নার সময়কাল ৩২-৩৭ মিনিট। এতে আমিষের পরিমান ১৯-২১%। জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন। ফসল হেক্টরপ্রতি ১.৮-২.০ টন। জাতটি নাবীতে বপন করেও অন্যান্য জাতের চেয়ে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটিতে ছোলা ভাল জন্মে। ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরী করতে হয়।
বীজের হার ৪৫-৫০ কেজি/হেক্টর, ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমান কিছু বেশী অর্থাৎ ৫০-৬০ কেজি.হেক্টর দিতে হবে। ছিটিয়ে ও সারি করে বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সরি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি রাখতে হবে। অগ্রহায়ণ মাসের ৫ থেকে ২৫ (২০ নভেম্বর)| তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবর শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ) সময়ে বীজ বপন কেেত হবে।
সারের নাম | সারের পরিমান/হেক্টর |
ইউরিয়া | ৪০-৫০ কেজি |
টিএসপি | ৮০-৯০ কেজি |
এমপি | ৩০-৪০ কেজি |
বরিক এসিড | ১০-১২ কেজি |
অণুজীব সার | ৫-৬ কেজি |
শেষ চাষের সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুপারিশ মত নির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অনুজীব সার প্রয়োগ করতে হবে। ইনোকুলাম সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে না।
বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতি বৃষ্টির ফলে যাতে জলঅবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সে জন্য অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে বপনের পর হাল্কা সেচ দিতে হবে।
ছোলার উইল্ট বা নুইয়ে পড়া রোগ দমন
ফিউজেরিয়াম অক্সিসপোরাম নামক ছত্রাক দ্বরা এ রোগ হয়। চারা অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত গাছ মারা যায় এবং পাতার রঙের কোন পরিবর্তন হয় না। পরিপূর্ণ বয়সে গাছ আক্রান্ত হলে পাতা ক্রমান্বয়ে হলদে রং ধারণ করে। আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।লম্বালম্বি কাটলে কান্ডের মাঝখানের অংশ কালো দেখা যায়। প্রতিকার
১। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন বারি ছোলা-৩, বারি ছোলা-৪ এর চাষ করতে হবে।
২। ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতেহবে। ছোলার গোড়া পচা রোগ দমন
ফিউজেরিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। চারা গাছে এ রোগে বেশী দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ হলদে হয়ে যায় এবং শিকড় ও কান্ডের সংযোগ স্থলে কালো দাগ পড়ে। গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে। আক্রান্ত স্থনে গাছের গোড়ায় ছত্রাকোর জালিকা ও সরিষার দানার মত স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা যায়। প্রতিকার
১। ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২। সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
৩। ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
ছোলার বট্রাইটিস গ্রে রোগ দমন
বট্রাইটিস প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ ঘটে থাকে। ছোলার বৃদ্ধি অবস্থায় কিংবা ফল আসার শুরুতেই এ রোগের আক্রমণ লক্ষ করা যায়। জমিটি গাছ বেশী ঘন থাকলে এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশী থাকলে এ রোগ ব্যাপকতা লাভ করে। এ রোগের লক্ষণ কান্ডে, পাতা, ফল ও ফলে প্রকাশ পায়। আক্রান্ত স্থনে ধূসর রংয়ের ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়। প্রতিকার
১। ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২। ব্যাভিস্টিন অথবা থিরাম প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
৩। ব্যাভিস্টিন ০.২% হারে ১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে।
ছোলার পড বোরার দমন
পোকার কীড়া (শুককীট) কচি পাতা, ফুল ও ডগা খায়। ফল বড় হওয়ার সময় ছিদ্র করে ভিতরের নমর অংশ খায়। একটি কীড়া পূর্ণঙ্গা হওয়ার পূর্বে ৩০-৪০ টি ফল খেয়ে ফেলতে পারে। এ রোগে ছোলার উৎপাদন অনেক হ্রাস পায়। প্রতিকার
১। কীড়া ছোট অবস্থায় হাত দ্বারা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
২। ডেসিস ২.৫ ইসি রিপকর্ড ১০ ইসি বা সিমবুস ১০ ইসি বা ফেনম ১০ ইসি ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ১-২ বার সেপ্র করতে হবে।
চৈত্রের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্য চৈত্র (মধ্য মার্চের শেষ ) সময়ে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।